কবি শামসুর রাহমানের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী

আজ আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান পুরুষ কবি শামসুর রাহমানের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী। পুরনো ঢাকার মাহুতটুলি এলাকার ৪৬ নম্বর বাড়িতে কবি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর তারিখে। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি অবশ্য ছিল নরসিংদীর রায়পুরা থানার পাড়াতলি গ্রামে। 'সাপ্তাহিক সোনার বাংলা' নামক পত্রিকায় ১৯৪৮ সালে ঊনিশশো ঊনপঞ্চাশ নামক কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে শামসুর রাহমানের কবিতা লেখার যাত্রা শুরু হয়। তাঁর লেখায় দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, মানবীয় অনুভূতিই ছিল প্রধান বিষয়।

১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে শামসুর রাহমান কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে রেডিও পাকিস্তান, দৈনিক পাকিস্তানদৈনিক বাংলা প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি কাজ করেছেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন।

শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। তিনি মোট ৬৬টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রৌদ্র করোটি, বিধ্বস্ত নীলিমা, নিরালোকে দিব্যরথ, নিজ বাসভূমে, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়, ইকারুসের আকাশ, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ, অন্ধকার থেকে আলোয় প্রভৃতি। শামসুর রাহমা উপন্যাস লিখেছেন ৪টি, প্রবন্ধগ্রন্থ লিখেছেন ১টি, ছড়ার বই ৮টি এবং অনুবাদ ৬টি।

সমকালীন বাংলাদেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান মারা যান ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তারিখে। তাঁর অন্যতম বিখ্যাত কবিতা "স্বাধীনতা তুমি" যতদিন বাঙালি থাকবে, ততদিন দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের মনে চেতনার ঝংকার তুলবে।

স্বাধীনতা তুমি

স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল, ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকাশোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারে খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শাণিত কথার ঝলসানিলাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চাখানায় আর মাঠে ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কাল বোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতে নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রে খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

কোন মন্তব্য নেই:

বই আলোচনা সমালোচনা

সাহিত্যের Webzine