রবীন্দ্রনাথের প্রথম কবিতা

বাংলা ১২৮০ সালের দ্বিতীয় বর্ষ মাঘ সংখ্যায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ভারতভূমি নামে একটি কবিতা ছাপা হয়েছিল। এই কবিতায় লেখকের নাম মুদ্রিত ছিল না। প্রকাশক বঙ্কিমচন্দ্র কবিতাটি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন - "এই কবিতাটি এক চতুর্দ্দশবর্ষীয় বালকের রচিত বলিয়া আমরা গ্রহণ করিয়াছি। কোনো কোনো স্থানে, অল্পমাত্র সংশোধন করিয়াছি। এবং কোনো কোনো অংস পরিত্যাগ করিয়াছি।"

বিভিন্ন রবীন্দ্রগবেষক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ এই কবিতাটিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত বলে চিহ্নিত করেছেন। কবির বয়স তখন ১২ বৎসর ১০ মাস। এই কবিতায় দেশের প্রতি কবির ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে। পরাধীন দেশের বেদনা তিনি গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। এই গভীর বেদনাকে কবি বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও তার রূপক উপমার মাধ্যমে কবিতারূপে মূর্ত করে তুলেছেন। সম্পাদক শিশিরকুমার এই কবিতার কয়েকটা স্তবককে উল্লেখ করে বলেছেন -"মাধ মাসের বঙ্গদর্শনে একটি কবিতা পাঠে আমাদের অনেক আশার সঞ্চার হইল। এই কবিতাটি একটি চতুর্দ্দশবর্ষ বয়স্ক বালকের রচিত। আমরা বোধহয় এই বালকটিকে চিনি"।

ভারতভূমি কবিতাটি ২২টি স্তবকে বিভক্ত। এর মধ্যে মাত্র ৩টি স্তবক নিম্নরূপ:-

*
কতদিন দিবাকর উদিছে গগনে;
রক্তিম বরণ ধরি, বিহারিয়া শূন্যোপরি,
রঞ্জন করেছে যত ভারত সন্তানে।
এবে কেন সেই সূর্য্য নাহি লাগে মনে।

*
কত দিবা অস্ত যায় কত রাত্র আসে,
এ রাত্র কিনা পোহাবে এমনি রহিয়া যাবে,
হবে না কি সূর্য্যোদয় ভারত আকাশে?
অন্ধকার রহিবে কি ভারত আবাসে?

*
কি লাগিয়ে রত্নভূমি দুখের আগার?
জাগো ভারতস্থ জন, মিথ্যা ঘুমে অচেতন,
আলস্য মুর্খতা দোষে দিবসে আঁধার।
জ্ঞানেতে করিয়া বল সত্য কর সার।

কোন মন্তব্য নেই:

বই আলোচনা সমালোচনা

সাহিত্যের Webzine