ডাকের বচন

খনার বচন আমরা জানি। কিন্তু ডাকের বচনকে অতটা চিনিনা। অথচ ডাকের বচন এককালে বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল। কৃষক ও বউঝিরা এই বচনগুলোকে কণ্ঠস্থ করে রাখতেন। তবে খনার বচন বেশি প্রচলিত বলে তার ভাষা কালক্রমে সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু ডাকের বচন অতটা প্রখ্যাত হয় নি বলে তার ভাষার প্রাচীনতা অনেকাংশেই রক্ষা পেয়েছে। 'ডাক' কোন ব্যক্তিবিশেষের নাম নাও হতে পারে। হয়ত একাধিক ব্যক্তি কালক্রমে বিশেষ জ্ঞানের যে পদগুলো রচনা করেছেন তাকেই ডাকের বচন বলা হয়। ডাক শব্দটি ডাকিনী শব্দের পুংলিঙ্গ হতে পারে। মধ্যযুগে বা প্রাচীন যুগে জ্ঞানী ব্যক্তিরা আধিভৌতিক শক্তির অধিকারী ছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। "চলিত কথা' অর্থেও ডাকের বচন কথাটি প্রযুক্ত হতে পারে। দীনেশচন্দ্র সেন অবশ্য ডাক'কে বঙ্গের সক্রেতীস্‌ বলেছেন। (বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, ১ম খণ্ড, ১৯৯৬, পৃ. ৯৪)

খনা কৃষক ও গ্রহনক্ষত্র বিষয়ে পণ্ডিত ছিলেন। তার বচনগুলির বেশিরভাগ কৃষিকাজ ও ভাগ্যগণনা সম্পর্কিত। কিন্তু ডাকের বচন কিছুটা ভিন্নরকম। এখানে মানব-চরিত্রের বিভিন্ন দিককে কখনও নির্মোহ কখনও বা সরাসরি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মানবজীবনের সারাৎসার ডাকের বচনগুলির অন্যতম আলোচ্য বিষয়। ধারণা করা হয় এই ডাকের বচনগুলি ৮০০-১২০০ খৃস্টাব্দের মধ্যে রচিত হয়েছিল।

ডাকের বচনের কয়েকটি উদাহরণ:-
ক) ঘরে আখা বাইরে রাঁধে।
অল্প কেশ ফুলাইয়া বাঁধে।।
ঘন ঘন চায় উলটি ঘাড়।
ডাক বলে এ নারী ঘর উজার।।

খ) নিয়ড় পোখরি দূরে যায়।
পথিক দেখিয়ে আউড়ে চায়।।
পর সম্ভাষে বাটে থিকে।
ডাক বলে এ নারী ঘরে না টিকে।।

গ) রাঁধে বাড়ে গায় না লাগে কাতি।
অতিথি দেখিয়া মরে লাজে।
তবু তার পূজার সাজে।।
সুশীলা শুদ্ধ বংশে উৎপত্তি।
মিঠা বোল স্বামীতে ভকতি।।
রৌদ্রে কাঁটা কুঁটায় রাঁধে।
খড়কাট বর্ষাকে বাঁধে।।
কাখে কলসী পানীকে যায়।
হেটমুণ্ডে কাকহো না চায়।।
যেন যায় তেন আইসে
বলে ডাক গৃহিণী সেই সে।।

কোন মন্তব্য নেই:

বই আলোচনা সমালোচনা

সাহিত্যের Webzine